Saturday, June 25, 2016

আর্সেনিক দূষণ ও তার প্রতিকার

আর্সেনিক দূষণ

আর্সেনিক দূষণ কনটেন্টেটিতে আর্সেনিক কেন সমস্যা, আর্সেনিক দূষণ এলাকা, আর্সেনিক রোগীর লক্ষণসমূহ, আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে করণীয়, আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা, পানির আর্সেনিক পরীক্ষা, আর্সেনিক দূষণমুক্ত করার উপায় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে

আর্সেনিক ছোঁয়াচে বা বংশগত রোগ নয়

আর্সেনিক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এক ধরনের বিষ। এর কোনো রং, গন্ধ ও স্বাদ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি লিটার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের দেশের বেশিরভাগ এলাকার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। আর্সেনিক রয়েছে এমন টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ আর্সেনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে এ রোগের কারণে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে এবং কেউ কেউ মারা যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত বেশি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে নেই। সেক্ষেত্রে আর্সেনিক মুক্ত পানি নিশ্চিত করার উপায়গুলি জানা থাকলে পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব। 


মানুষের শরীরে সাধারনত তিনভাবে আর্সেনিক প্রবেশ করতে পারে

প্রথমত- বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীর ভিতর দিয়ে
দ্বিতীয়ত- পানি ও খাদ্য দ্রব্যের মাধ্যমে খাদ্যনালীর ভিতর দিয়ে
তৃতীয়ত- ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে|
  

আর্সেনিক কেন সমস্যা 

পানিতে আর্সেনিক বিষ থাকলেও আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই না। এ কারণে আমরা না জেনেই অনেক সময় আর্সেনিক বিষ রয়েছে এমন নলকূপের পানি পান করি। আর এভাবে আর্সেনিক বিষ পান করার কারণে আমরা আর্সেনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হই। পানি বা অন্য কোনো মাধ্যম হতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে আর্সেনিক শরীরে প্রবেশ করলে, ধীরে ধীরে দেহে তা জমা হতে থাকে এবং মানুষের দেহে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেখা দেয়। মানুষের দেহে সাধারণত আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার লক্ষণ ৬ মাস থেকে ২০ বছর অথবা এর চেয়েও বেশী বছর পর দেখা যায়। এটি নির্ভর করে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর।


আর্সেনিক দূষণ এলাকা 

এদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৯টি জেলার নলকূপের পানিতে আর্সেনিক দূষণ রয়েছে। শেরপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগরাছড়ি ও বান্দরবান এই ৫টি জেলা এখনও আর্সেনিক দূষণমুক্ত বলে মনে করা হয়।


আর্সেনিক রোগীর লক্ষণসমূহ 

কোনো ব্যক্তির চুল, নখ ও চামড়া পরীক্ষা করলে বোঝা যায় যে, সে আর্সেনিকে আক্রান্ত কিনা। তবে একজনের শরীরে আর্সেনিকের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ মাস থেকে ২০ বছর অথবা এর চেয়েও বেশী বছর সময় লাগে এবং তিনটি পর্যায়ে লক্ষণগুলো দেখা দেয় -


রোগীর গায়ে (যেমন বুকে, পিঠে, পেটে) কালো দাগ দেখা দেয়। চামড়ার রং কালো হয়ে যায় বা ছোট ছোট কালো দাগ হয়।
হাত ও পায়ের তালু শক্ত খসখসে হয়ে যায় ও ছোট ছোট শক্ত গুটি দেখা দিতে পারে। পরে কালো কালো দাগ হয়।
গায়ের চামড়া মোটা ও খসখসে হয়ে যায়।
বমি বমি ভাব এবং বমি হয়; পাতলা পায়খানা হয়।
খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি, রক্ত আমাশয়, মুখে ঘা ইত্যাদি দেখা দেয়।
কখনো কখনো জিহবার উপর ও গায়ের ভিতর কালো হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষণসমূহ : 

চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় সাদা, কালো বা লাল দাগ দেখা দেয়।
হাত-পায়ের তালু ফেটে যায় ও শক্ত গুটি ওঠে।
হাত-পা ফুলে ওঠে।

তৃতীয় পর্যায়ের লক্ষণসমূহ: 

কিডনি, লিভার ও ফুসফুস বড় হয়ে যায় ও টিউমার হয়।
হাত ও পায়ে ঘা হয়, পচন ধরে।
চামড়া, মূত্রথলি, ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায়।
জন্ডিস হয়।
পেটে ও মাথায় ব্যথা হয়।
রক্ত বমি হয়।

আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে করণীয় 

আর্সেনিক রোগের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে দেখা করতে হবে ও তাঁর পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
অবশ্যই আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে হবে।
নদী, পুকুর, বিল ইত্যাদির পানি ছেঁকে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করা যায়।
বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পান করা যেতে পারে, এজন্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পর পানি ধরতে হবে।
আর্সেনিকে আক্রান্তরোগী সবধরনের খাবার খেতে পারেন। তবে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে হবে।

আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা  
 
প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম। ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে সে পানি পান করা ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

আর্সেনিক দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য করণীয় 

নলকূপ বসানোর আগে মাটির নিচের পানিতে আর্সেনিক মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে;
পুরানো নলকূপের পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, টিউবওয়েল বসানোর আগে আশেপাশের টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করতে হবে;
টিউবওয়েল বসানোর পর, গোড়া বাঁধানোর আগে আর্সেনিক পরীক্ষা করাতে হবে;
টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেলে টিউবওয়েলের মুখ লাল রং করতে হবে। পানিতে আর্সেনিক না থাকলে সবুজ রং করতে হবে। লাল রং দেখলে ঐ নলকূপের পানি খাওয়া যাবে না;
আর্সেনিক দূষণমুক্ত টিউবওয়েলের পানি প্রতি ৬ মাস পরপর পরীক্ষা করাতে হবে। দেখতে হবে পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত আছে কি না;
আর্সেনিকযুক্ত পানি রান্না ও খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না;
পাতকুয়ার পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা পরীক্ষা করে পান করতে হবে ;
পুকুর বা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। এজন্য এক কলসি (২০ লিটার) পানিতে আধা চামচ (১০ মিলিগ্রাম) ফিটকিরি মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। ফিটকিরি মিশালে পানির ময়লা কলসির নিচে জমা হবে। সাবধানে পাত্রের উপরের পরিস্কার পানি অন্য পাত্রে ঢেলে ফুটিয়ে পান করতে হবে;
বৃষ্টির পানি আর্সেনিকমুক্ত। তাই বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পর পরিস্কার পাত্রে ধরে সেই পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।
আর্সেনিকযুক্ত পানি ফুটিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ ফুটালে আর্সেনিক দূর হয় না বরং পানি শুকিয়ে গেলে তাতে আর্সেনিকের ঘনত্ব আরো বেরে যায়। 

পানির আর্সেনিক পরীক্ষা 

আমরা দুইভাবে পানি পরীক্ষা করতে পারি -

ফিল্ড কিটের মাধ্যমে।
গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে।
এছাড়া নিজে না করে উপজেলা বা জেলার পরীক্ষাগারে পানি নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। ফিল্ড কিটের সাহায্যে খুব অল্প সময়ে পানি পরীক্ষা করা যায়। ফিল্ড কিটে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকে। টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে সাথে সাথেই পানি পরীক্ষা করা যায়।
সরকারিভাবে উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এনজিও , যারা আর্সেনিক নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করেও পরীক্ষা করানো যায়।

পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য যাদের সাথে যোগাযোগ করবেন-

ওয়াটার এইড বাংলাদেশ
বাড়ি-৯৭ বি, রোড-২৫, ব্লক-এ, বনানী, ঢাকা-১২১৩। ফোন : ০২৮৮১৫৭৫৭, ফ্যাক্স : ০২৮৮১৮৫২১
ই-মেইল : info@wateraidbd.org

এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ
বাড়ি-৪৬, রোড-১৩/সি, ব্লক-ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩। ফোন : ০২৯৮৯৪৪৯৩,
ই-মেইল : aandhaka@citech-bd.com, aandhaka@yahoo.com

এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন
৪/৬ ব্লক-ই, লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭, বাংলাদেশ। ফোন : ০২৮১৫৪২৭৩-৪, ফ্যাক্স : ০২৮১১৭৯২৪
ই-মেইল : ngof@bangla.net, ngofaic@bangla.net

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ
বাড়ি-০৮, রোড-১৩৬, গুলশান-১ ঢাকা-১২১২। ফোন : ০২৮৮৩৭৭৯৬, ০২৯৮৯৪৩৩১
ই-মেইল : mail@actionaid-bd.org

আর্সেনিক দূষণ মুক্ত করার উপায়-

 বালতি পদ্ধতি-


এই পদ্ধতিতে ২টি বালতি ব্যবহার করা হয়। ধরে নিই, একটি লাল অন্যটি নীল বালতি। নীল বালতি উপরে ও লাল বালতি নিচে থাকবে।
বালতি দুটিতে ট্যাপ লাগানো থাকবে।
নীল বালতিতে আর্সেনিক দূষণমুক্ত টিউবওয়েলের পানি থাকবে। এই পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করার জন্য পানিতে ফিটকিরি ও পটাশের মিশ্রণ দিতে হবে। ২০ লিটার পানির জন্য ৪ গ্রাম মিশ্রণ প্রয়োজন।
রাসায়নিক মিশ্রণ বা রাসায়নিক দ্রব্য পানিতে মিশিয়ে নাড়ানি দিয়ে ১৫-২০ বার পানি এমনভাবে ঘোরাতে হবে, যেন পানির মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়।
এবার তলানী জমার জন্য ২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
দুই ঘন্টা পরে উপরের নীল রঙের বালতির ট্যাপ খুলে দিতে হবে। উপরের বালতির আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি নিচের লাল রঙের বালতিতে জমা হবে।
লাল রঙের বালতিতে ১০ ইঞ্চি পরিমাণ বালির ফিল্টার থাকে। এই ফিল্টার দিয়ে পানি আরও দূষণমুক্ত হবে।

সতর্কতা
মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র আর্সেনিক দুষণমুক্ত করার জন্য বালতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
বালতি পদ্ধতিতে নীল বালতিতে ট্যাপ এমনভাবে লাগানো হয, যাতে বালতির দুই ভাগ পানি নিচের লাল বালতিতে জমা হয়। তলানীর আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি নীল বালতিতে থাকবে।
পানিতে রাসায়নিক মিশ্রণ দেওয়ার জন্য কাঠের চামচ ব্যবহার করতে হয়। পানিতে মিশ্রণ ভালোভাবে মেশানোর জন্য নাড়ানি ব্যবহার করতে হয়।
বালতি পদ্ধতির মাধ্যমে দিনে ২ বার পানি আর্সেনিক মুক্ত করা যায়। এতে ৪/৫ জনের একটি পরিবারে খাওয়া ও রান্নার কাজ চলে।
নীল বালতিতে যে তলানী জমবে ও পানি থাকবে তা কোনো গর্তে বা গোবরের গাদায় ফেলতে হবে।

তিন কলসি পদ্ধতি
এই পদ্ধতির জন্য ৩টি মাঝারি আকারের কলসি প্রয়োজন। এই কলসি ৩টি একটি কাঠের স্যান্ডের উপর সাজানো থাকে।
উপরের ২টি কলসির নিচে ছিদ্র করতে হবে। নিচের কলসিতে কোনো ছিদ্র থাকবে না। এটাতে আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি জমা থাকবে।
ছিদ্র কলসির উপরেরটিতে লোহার গুড়া ও মোটা বালি বা সিলেট স্যান্ড থাকবে। ২য় বা মাঝের কলসিতে চিকন বালি রাখতে হবে এবং ৩য় বা নিচের কলসি খালি থাকবে। এই খালি কলসিতে আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি জমা হবে।
এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে উপরের কলসিতে আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি ঢালতে হবে। এই পানি পাইপের মাধ্যমে ২য় কলসিতে এসে জমা হবে। এই পদ্ধতিতে পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করার জন্য ১ দিন সময় লাগে।
সর্তকতা
এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করার সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কলসিগুলো সব সময় পরিস্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
ছিদ্র কলসিগুলো কখনও মাটির রাখা যাবে না। কারণ, ছিদ্র দিয়ে পোকামাকড়, রোগজীবাণু ঢুকতে পারে। কলসিগুলে সবসময় কাঠের স্ট্যান্ডে থাকবে।
কলসিগুলো রং করা যাবে না।

পি এস এফ পদ্ধতি 

এই পদ্ধতিতে পানি দূষণমুক্ত করার জন্য একটি পুকুরের প্রয়োজন।
ঐ পুকুর পাড়ে একটি টিউবওয়েল বসাতে হবে। টিউবওয়েলের সাথে পুকুরের সংযোগ থাকবে। টিউবওয়েল চাপলে পুকুর থেকে পানি আসবে।
টিউবওয়েলের পাশে একটি বড় পানির ট্যাংক থাকবে। টিউবওয়েলের মুখ এই ট্যাংকের সাথে সংযোগ করতে হবে। টিউবওয়েলের পানি এই ট্যাংকে এসে পড়বে।
পি এস এফের ট্যাংকের ভেতর ৩টি খোপ থাকবে। ট্যাংকের প্রথম খোপে থাকবে সিলেট স্যান্ড বা মোটা বালি। বালির নিচে জালি রাখা হয়। টিউবওয়েল চাপলে পানি প্রথমে মোটা বালিতে পড়বে। এই বালি ভেদ করে পানি অনেকাংশে জীবাণুমুক্ত হয়ে জালি দিয়ে দ্বিতীয় খোপে আসবে।
দ্বিতীয় খোপে চিকন বালি, ফিল্টার ও জালি থাকবে। প্রথম খোপ থেকে পানি জীবাণুমুক্ত হয়ে ২য় খোপে পড়বে। দ্বিতীয় খোপ থেকে পানি আরও দূষণমুক্ত হয়ে তৃতীয় খোপে পড়বে।
তৃতীয় খোপে থাকবে একটি অতি চিকন জালি। এই জালি দিয়ে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পানি আসবে। এই খোপের সাথে বাইরে ট্যাপ লাগানো থাকবে। ট্যাপ খুলে পানি নিতে হবে। পিএসএফ পদ্ধতি আর্সেনিক আক্রান্ত ও লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য বেশি প্রয়োজন।
সতর্কতা
পিএসএফ পদ্ধতিতে পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ হওয়ায় ঐ পানি রান্না, পান করাসহ সংসারের সব কাজে ব্যবহার করা যাবে।
পিএসএফের পুকুর এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যেন সবসময় পুকুরে পানি থাকে।
পিএসএফ-এর জন্য যে পুকুর ব্যবহার করা হবে, সেই পুকুরের চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে। পুকুরে চারদিকে উঁচু বাঁধ দিতে হবে। যেন বৃষ্টির সময় বাইরের ময়লা পানি পুকুরে যেতে না পারে। পুকুরে গোসল করা যাবে না। কাপড় ধোয়া ও মাছ চাষ করা যাবে না।
পিএসএফ-এর পুকুরে পায়খানা বা কোনো ড্রেনের সংযোগ থাকতে পারবে না। পুকুর সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। চারপাশে যেন কোনো আগাছা না জন্মায়।
প্রতি ১ মাস পর পর পিএসএফ বা ট্যাংক এবং বালি পরিস্কার করতে হবে।
পিএসএফ-এর পানি ৮-১০ টি পরিবার ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিবার পানি নেওয়ার পর আবার টিউবওয়েল চেপে ট্যাংক পানি পূর্ণ করতে হবে।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পূর্ণ আর্সেনিক দূষণমুক্ত ও নিরাপদ পানি পাওয়া যায়।
এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখা যায়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ঘরের পাশে একটি বড় ঢাকনাযুক্ত মটকা বা ট্যাংক থাকবে। এই মটকা বা ট্যাংকের সাথে নিচের অংশে ট্যাপ লাগাতে হবে।
টিনের ঘরের চালের টিন বাকিয়ে এই নালা তৈরি করতে হবে। এই নালা ট্যাংকের সাথে সংযোগ থাকবে। বৃষ্টি নামলে পানি চাল বেয়ে নালায় পড়বে। এই নালা দিয়ে পানি ট্যাংকে যেয়ে পড়বে।
খড়, ছন ও গোলপাতার ঘরের চাল ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতেও একটি নালা তৈরি করতে হবে। যা দিয়ে বৃষ্টির পানি ট্যাংকে পড়বে। ত্রিপল এমনভাবে ঘরের চালে ও খুঁটির সাথে বাঁধতে হবে যাতে পানি ত্রিপল জমা হয়। এই পলিথিনে ছিদ্র থাকবে। ছিদ্র দিয়ে পানি মটকা বা ট্যাংকে পড়বে।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা বৃষ্টির পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে ১০/১২ জন অথবা ২ টি পরিবার খরা মৌসুমে চলতে পারে। এজন্য ৩,২০০ লিটারের একটি ট্যাংক প্রয়োজন।
বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পরে পানি ট্যাংকে সংগ্রহ করতে হবে।
বছরে দুইবার ট্যাংক পরিস্কার করতে হবে।

 সুত্র - জাতীয় ই-তথ্যকোষ